সেদিন রাত ৩টা। চারদিকে ঘোর অন্ধকার। জানালার বাইরে হালকা বাতাস বইছে, চারপাশ নিস্তব্ধ। সবাই ঘুমিয়ে, কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। হাতে ধরা একটা বই—“দ্যা গ্রোথ কোড”। আমি পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছি, পড়ছি, থেমে ভাবছি। আবার পড়ছি। প্রতিটা লাইন যেন আমার মাথার ভিতরের প্রশ্নগুলোর জবাব দিচ্ছে। মনে হচ্ছিল, এটা শুধু একটা বই নয়—এটা একটা উত্তর, একটা দিকনির্দেশনা, একটা মানচিত্র, যা আমাকে আমার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
আমার যাত্রা শুরু যেখানে
আমি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম নিজের একটা ব্যবসা থাকবে। বড় হওয়ার পর ফেসবুক, ইউটিউব, আর ব্লগ পড়ে কিছু আইডিয়া নিয়ে শুরু করলাম অনলাইন মার্কেটিং। প্রথমে মনে হয়েছিল, শুধু কাজ করলেই হবে। কিন্তু কিছুদিন পর বুঝলাম—পরিশ্রম ছাড়া যেমন কিছু হয় না, ঠিক তেমনি শুধুমাত্র পরিশ্রম করলেই কিছু হয় না। দরকার একটা পরিষ্কার দিকনির্দেশনা। আর তখনই আমার হাতে আসে “দ্যা গ্রোথ কোড”।
এই বইটি পড়ার পর আমার মনে হলো—“ইশ! এটা যদি আগেই পড়তাম!” কারণ এখানে শুধু বিজনেসের গল্প নেই, এখানে আছে বিজ্ঞান। আছে স্ট্র্যাটেজি, আছে ম্যাথড, আছে এক্সিকিউশন প্ল্যান। বইটি পড়ার পর আমি নিজের কাজকে একদম নতুন চোখে দেখতে শিখেছি। ব্যবসার প্রতিটা ধাপ যেন এবার বাস্তব হয়ে উঠেছে।
বইটির সারাংশ
দ্যা গ্রোথ কোড বইটি লেখক মার্ক অনুপম মল্লিক এমনভাবে সাজিয়েছেন যেন আপনি প্রতিটা অধ্যায় পড়ে নিজেকে ব্যবসার একেকটা ধাপে কল্পনা করতে পারেন। বইটিতে ৩টি মূল ভাগে আলোচনা করা হয়েছে:
১. Thinking Like a Growth Architect — মানসিক প্রস্তুতি ও সঠিকভাবে ভাবার পদ্ধতি।
২. Building the Growth Engine — ব্যবসার ভিত গড়ে তোলা এবং মেশিনের মতো চালানো।
৩. Scaling with Science — সায়েন্টিফিক থিওরি ব্যবহার করে ব্যবসা এক্সপোনেনশিয়ালি স্কেল করা।
এই তিনটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে লেখক পুরো বইটি সাজিয়েছেন। এমন কিছু টার্ম এবং ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করেছেন যা বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন। প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে বাস্তব গল্প, থিওরি আর প্র্যাকটিকাল টেকনিকের চমৎকার মিশ্রণ।
কেন বইটা আলাদা
✅ লেখক শুধু অনুপ্রেরণামূলক কথা বলেননি, বাস্তব প্ল্যান ও রোডম্যাপ দিয়েছেন।
✅ পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত – এই তিনটি বিষয়কে ব্যাবসার গ্রোথের ব্যাখ্যায় ব্যবহার করেছেন।
✅ মার্ক অনুপম মল্লিক নিজেই বহু ব্যবসার সাথে কাজ করেছেন, ফলে তার অভিজ্ঞতাগুলো এখানে জীবন্তভাবে উঠে এসেছে।
উদাহরণস্বরূপ, লেখক একটি অধ্যায়ে “ক্রিটিক্যাল ম্যাস” নামক একটি ধারণা দেন, যেখানে বোঝানো হয়েছে—ব্যবসার এক পর্যায়ে পৌঁছে গেলে সেটা আপনা-আপনি বাড়তে থাকে। এটা একদম পারমাণবিক চেইন রিঅ্যাকশনের মতো! এমন ভিজ্যুয়াল ব্যাখ্যা বইটিকে শুধু ইনফরমেটিভ না, বরং এনগেজিংও করে তুলেছে।
বাস্তব জীবনের প্রভাব
আমি বইটি পড়ার পরই আমার নিজের কিছু সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছি। যেমন:
- আমার ব্যবসায় গ্রোথ হচ্ছে না কারণ আমি নির্দিষ্ট একটি শ্রোতার কথা মাথায় রাখিনি।
- আমার মার্কেটিং প্ল্যান ছিল ইমোশন বেইজড, অথচ লেখক বললেন – “ইমোশন ব্র্যান্ড তৈরি করে, কিন্তু স্ট্র্যাটেজি টিকিয়ে রাখে।”
এই লাইনটা আমার চোখ খুলে দিয়েছিল। আমি তারপর থেকেই আমার টার্গেট অডিয়েন্স, ইউএসপি, এবং কনভার্সন ফানেল নতুন করে সাজিয়েছি। পাশাপাশি আমি বুঝেছি যে, শুধু একটা প্রোডাক্ট বানালেই হবে না, সেটা কাকে, কীভাবে, কখন দেবো—এই তিনটি বিষয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট পলিসি বদলেছি। ভিডিও থাম্বনেইল ডিজাইন থেকে শুরু করে কনটেন্ট রাইটিং—সবকিছুতেই এখন একটা গ্রোথ মাইন্ডসেট বসানো হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে “দ্যা গ্রোথ কোড” এর কারণেই।
বইটি কাদের জন্য?
- স্টার্টআপ ফাউন্ডার
- ফ্রিল্যান্সার যারা নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাচ্ছেন
- অনলাইন ব্যবসায়ী যারা স্কেল করতে পারছেন না
- ইউটিউবার বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর যারা প্রোডাক্ট লঞ্চ করতে চান
- কোচ, মেন্টর বা ট্রেইনার যারা নিজের কোর্স বিক্রি করতে চান
- ছাত্র যারা ফিউচার বিজনেস লিডার হতে চায়
বই থেকে প্রিয় কিছু লাইন:
“বিজনেসে ম্যাজিক বলতে কিছু নেই। ম্যাথ আছে, ম্যাথড আছে, আর আছে ম্যান। যার হাতে ফর্মুলা, তার হাতেই ভবিষ্যৎ।”
“আপনি যদি মাছে বাজারে গিয়ে মাংস বিক্রি করেন, মানুষ আপনাকে পাগল ভাববে। ঠিক সেভাবেই ভুল মার্কেটে সঠিক প্রোডাক্টও ফ্লপ করে।”
“একটা সিস্টেম ছাড়া ব্যবসা মানে হচ্ছে একটা গাড়ি চালানো যার স্টিয়ারিং নেই।”
কেন অ্যাকশন নেবেন এখনই?
বইটি নতুন হলেও এর মধ্যে একটা রেভল্যুশন শুরু করে দিয়েছে। অনেকে এর মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেছেন, আবার অনেকেই পুরনো ব্যবসার ভেঙে নতুনভাবে সাজিয়েছেন। তাই দেরি না করে এখনই পড়া শুরু করুন। এটা কেবল অনুপ্রেরণা নয়, বরং বাস্তব ব্যবসায়িক অস্ত্র।
📘 বইটি কিনতে নিচের বইতে ক্লিক করুন

ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণা
আমি আগে অনেক বই পড়েছি—“রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড”, “থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ”, “স্টার্ট উইথ হোয়াই”। কিন্তু “দ্যা গ্রোথ কোড” আমার নিজের ভাষায়, আমার দেশের উদাহরণে, আমার মতো একজন মানুষের লেখায় পাওয়া—এটা আমাকে আলাদা রকমের কানেকশন দিয়েছে।
আর সবচেয়ে বড় কথা, এই বই আমাকে শুধু শেখায়নি, বরং ভাবতে শিখিয়েছে। নিজেকে প্রশ্ন করতে শিখিয়েছে। নিজেকে নিয়মিত আপডেট করতে শিখিয়েছে। এখন আমি ব্যবসাকে আর একটা ছোট খেলা মনে করি না, বরং এটা আমার দায়িত্ব, আমার চ্যালেঞ্জ, এবং আমার স্বপ্নের সিঁড়ি।
শেষ কথায়:
আপনি যদি আজ থেমে যান, আগামীকাল কেউ আপনার জায়গা দখল করে নেবে। কিন্তু আপনি যদি “দ্যা গ্রোথ কোড” হাতে নিয়ে আজ থেকেই পরিকল্পনা শুরু করেন—তাহলে আগামীকাল অন্য কেউ আপনাকে অনুসরণ করবে।
সাফল্য হাতে ধরা যায় না, কিন্তু এর পথচিহ্ন আঁকা যায়। আর এই বইটাই সেই প্রথম রেখাটি আঁকে।
📘 দ্যা গ্রোথ কোড এখনই সংগ্রহ করুন

আপনি যদি আরও বিজনেস রিলেটেড ব্লগ পেতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটিকে ফলো করো